Source LINK
মুসলিম বিশ্বের বর্তমান সময়ের প্রধান ইস্যু সমূহ।
বিগত দিনগুলোতে আমার কাছে মুসলিম উম্মাহর জন্য কতগুলো বিষয়কে প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। এর মধ্যে একটি ইস্যুতে আমার মনকে কিছুটা পরিবর্তন করেছি-যা আমি আগে এত বড় ইস্যু হিসেবে দেখেনি। সেটি হলো নব্য সা¤্রাজ্যবাদ (ঘবি ওসঢ়বৎরধষরংস) । এ সা¤্রাজ্যবাদীরা কারা তা আমরা সবাই জানি। আজ তারা চাচ্ছে রাজনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে বিশ্বকে শাসন করতে। তারা চায় তাদের আদেশ নিষেধকেই(ফরপঃধঃরড়হ) মেনে চলতে হবে, তাদের মতো চলতে হবে। আইএমএফ (ওগঋ), বিশ্বব্যাংক (ডড়ৎষফ ইধহশ) কিংবা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডড়ৎষফ ঞৎধফব ঙৎমধহরুধঃরড়হ) মাধ্যমেও এ রকম ডিকটেশন আসতে পারে।
নব্য সাম্রাজ্যবাদের পর মুসলিম বিশ্বের জন্য অন্যতম প্রধান ইস্যু হলো শিক্ষা। এ বিষয়টিকে আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।
ওংষধসরুধঃরড়হ ড়ভ কহড়ষিবফমব এর লেখক ড. ইসমাইল রাজি আল ফারুকী’র দৃষ্টিতে শিক্ষা উম্মাহর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। আমি একটু আগে যে চ্যালেঞ্জের (আমেরিকান ডিক্টেরশিপ, আমেরিকান চ্যালেঞ্জ, পশ্চিমা চ্যালেঞ্জ) কথা বললাম তা মোকাবিলা করার জন্য আমাদেরকে একটি ভালো শিক্ষা ব্যবস্থা দাঁড় করাতে হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমেরিকা ও পশ্চিমাদের চ্যালেঞ্জ, সেটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কিংবা সাংস্কৃতিক যেটিই হোক- এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য আমাদের একটি ভালো শিক্ষা ব্যবস্থা দরকার। সভ্যতার দ্বন্দ্বে ইসলাম জয়ী হবে- নামে হোক বেনামে হোক, যদি আমাদের একটি ভালো শিক্ষা ব্যবস্থা এবং ভালো শিক্ষিত জনশক্তি (পুরুষ ও নারী) থাকে। কিংবা যদি আরা তা গড়তে পারি, তবেই তা সম্ভবপর হবে বলে আমি মনে করি।
এখানে আমি শিক্ষার কয়েকটি জটিল বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই। একটি হলো এর সংজ্ঞাগত বিষয়। ইসলামী শিক্ষার ক্ষেত্রে কতগুলো সংজ্ঞাগত বিষয় রয়েছে। ইসলামী শিক্ষা কি?
এটি কি শুধু কোরআন, সুন্নাহ ও ফিকাহর জ্ঞান। নাকি এটি সকল প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞানের ইসলামী মূল্যবোধ, জ্ঞানের ইসলামীকরণ আন্দোলনের সমন্বয়। মালয়েশিয়া, পাকিস্তান প্রভৃতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি বিষয় বেরিয়ে এসেছে, সেটি হলো, সকল শিক্ষাই ইসলামী মূল্যবোধকে ধারণ করবে, ইসলামী শিক্ষার আওতার মধ্যে হবে, মূল্যবোধ ভিত্তিক হবে অথবা এর আওতা বহির্ভূত হবে না। তারা এটি মেনে নিয়েছে যে শুধু কোরআন পড়া, হাদিস পড়া, শুধু ফিকাহ পড়া, আরবি পড়া ইসলামী শিক্ষা নয়। যদি আমাদের ছেলেরা কম্পিউটার সায়েন্স, ফিজিক্্র এবং অন্যান্য সায়েন্স পড়ে এবং তাতে যদি গ্রহণীয় ইসলামী বিষয়ও শিক্ষায় সংযোজিত করা হয় অথবা অন্য কোনোভাবে রাখা হয় তাও ইসলামী শিক্ষার আওতার মধ্যে হবে। কাজেই বলা যায় যেকোনো ভাবেই হোক বর্তমানে সংজ্ঞাগত সমস্যাটি নেই। কিন্তু হতে পারে যারা দুনিয়া সম্পর্কে জানে না- তারা হয়তো বিতর্ক করতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি এলিটদের মধ্যে এ সমস্যাটি নেই এবং আল্লাহতায়ালা চাইলে সেভাবেই বিষয় এগিয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।
এখন আমি আমাদের স্কুল সিস্টেম সম্পর্কে বলতে চাই। বর্তমানে স্কুলের উপর অনেক কাজ হয়েছে। বিশেষভাবে পাকিস্তান, ইরান, সুদানে। সৌদি আরবে স্কুল সিস্টেমে ইসলাম ও আধুনিক শিক্ষার দারুণ সমন্বয় ঘটেছে। সুতরাং বলা যায় আজ আমাদের যতেষ্ট স্কুল শিক্ষার কারিকুলাম আছে যা আমরা বাংলাদেশে নিয়ে আসতে পারি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আজ আমরা যেখানে এসেছি তার ফলে এখানে ইসলামী শিক্ষা ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় গড়ে ওঠা সম্ভব। বাংলাদেশ সহ মুসলিম বিশ্বকে মালয়েশিয়া বা ইসলামাবাদ ইসলামিক ইউনিভার্সিটির ভিত্তিতে শিক্ষা প্রোগ্রাম সাজাতে হবে। এ মডেলকে প্রয়োজন মনে করলে একটু রিফাইল্ড করে, প্লাস-মায়নাস করে আমরা সেটি নিতে পারি। এটি মুসলিম বিশ্বে উচ্চ শিক্ষার ইসলামিকরণে মডেল হতে পারে। এখানে একটি কথা বলতে হবে, অমুসলিমদের জন্য পর্যাপ্ত বিকল্প খোলা রাখতে হবে। এটি আমাদের মনে রাখতে হবে এবং যদি কেউ নাও করে থাকে তবে আমাদের তা করতে হবে। ইসলামের “লা ইকরাহা ফিদদীন” এবং “জাস্টিসের” যে স্পিরিট তা সামনে রাখতে হবে। “লা ইকরাহা ফিদদীন” ও “জাস্টিস” এর মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। একে সামনে রেখে অমুসলিমদের জন্য প্রচুর অপশন( যেখানে যে রকম প্রয়োজন) দেয়া উচিত। এখানে কোনো আন্দোলন সৃষ্টি করা, কারো দাবির সুযোগ সৃষ্টি করা, অথবা পত্রিকায় উঠার পর ব্যবস্থা নেয়া যেন না হয়। এটি ইসলামের জাস্টিসের দাবি এবং এটিই আমাদের জন্য ভালো।
এখানে মাদরাসা স্ট্রিম সম্পর্কে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। মাদরাসা স্ট্রিম সম্পর্কে আমি খুব ব্যাপকভাবে চিন্তা করেছি। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি মাদরাসাকে শুধু আলেম তৈরি করার জন্যেই চাচ্ছি? তার উদ্দেশ্য কি? নাকি শিক্ষার একটি মূলধারা করতে চাচ্ছি? প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি শুধু আলেম তৈরি করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে তো এত মাদরাসার দরকার নেই। এত কওমী কিংবা এত আলিয়া মাদরাসার তাহলে প্রয়োজন কি? যদি আমরা চাই মাদরাসা ধারা অন্যতম একটি মূলধারা হবে তাহলে রেডিক্যাল পরিবর্তন করতে হবে। এ পরিবর্তনটি কি? আমাদের দেশে কামিল মাদরাসার চারটি কোর্স আছে-আদব, তাফসীর, ফিকাহ ও হাদিস। আমি সংক্ষেপে বলব, আরো কয়েকটি কামেল কোর্স তাতে যোগ করতে হবে। কামেল ইকোনোমিকস, কামেল পাবলিক এ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং অন্যান্য কয়েকটি প্রয়োজনীয় বিষয়ে কামেল খুলতে হবে। চারটির জায়গায় ছয়টি, আটটি বা দশটি করতে হবে। তাতে বর্তমান কোর্সটি আলেম, ফাজেল পর্যন্ত মোটামুটি এক থাকতে পারে। তারা বর্তমানে কি করে? এক পর্যায় পর্যন্ত এ রকম পড়ে তারপর আলাদা হয়ে যায়।
তেমনিভাবে ফাজেল পর্যন্ত ঠিক রেখে আমাদেরকেও আরো চারটি, ছয়টি কোর্স যোগ করতে হবে। সে সাথে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। কওমী মাদরাসার ক্ষেত্রেও একই কথা। যদি মসজিদ আর মাদরাসার জন্যই শুধু আলেম তৈরী করা মাদরাসার উদ্দেশ্য হয়, তাহলে তো এত হাজার হাজার কওমী মাদরাসার দরকার নেই। কিন্তু তাদের যদি উদ্দেশ্য থাকে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি তৈরি করা তাহলে তাদেরকেও নতুন নতুন বিভাগ খুলতে হবে। এখন কেবল দাওরায়ে হাদিস আছে। তাদের শেষের চার বছর পরিবর্তন করতে হবে। এখানে দাওরায়ে একতেমাদের (অর্থনীতি) মতো আরো তিন-চারটি দাওরা বাড়াতে হবে যাতে তারা সমাজ, জাতি এবং অর্থনীতি, প্রশাসনের জন্য যোগ্য লোক তৈরি করতে পারবে। এ ধরনের সংস্কার করলেই কওমী মাদরাসা এবং আলীয়া মাদরাসা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার দু’টি মূল শাখা হিসেবে টিকে থাকবে এবং অবদান রাখতে পারবে।
এরপর আমি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সহশিক্ষা নিয়ে আলোচনা করব। সহশিক্ষার ক্ষেত্রে বর্তমানে দু’টিই অনুসরণ করা হচ্ছে। মালয়েশিয়ায় ড্রেস কোডসহ (হিজাবসহ) একত্রে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে এবং ইসলামাবাদে ক্যাম্পাস আলাদা করে দেয়া হয়েছে। ইসলামী শিক্ষাবিদগণ দু’টিকেই বৈধ গণ্য করেছেন। আমি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সহশিক্ষা খুব সুবিধাজনক মনে করি না। আমাদের বর্তমান সমাজ পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ার তুলনায় অধিক সেক্যুলার। এখানে আলাদা ক্যাম্পাস ভালো ও সংগত। তবে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ইসলামী শিক্ষাবিদগণ যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন সে কথা আলাদা। কিন্তু অবশ্যই ছেলেমেয়েদের জন্য আলাদা আলাদা ক্যাম্পাসই লক্ষ্য হওয়া উচিত। হাই স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে সহশিক্ষা একেবারেই থাকা উচিত নয়। এর ফলাফল খুব খারাপ হয়।
ইসলামের একটি অন্যতম প্রধান বিষয় হলো বিভিন্ন রকম চরমপন্থা ( াধৎরড়ঁং ঃুঢ়ব ড়ভ বীঃৎবসরংস) যা ইসলামকে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যারা চরমপন্থী তাদের অবস্থান কারোর হয় এ পাশে নয় ঐ পাশে, যে কোনো এক প্রান্তে। ফলে তারা কখনো সমন্বয় করতে জানে না। সমন্বয় করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু সমন্বয় করা তখনই সম্ভব যখন মানুষ মডারেট হয়, মধ্যপন্থা অবলম্বন করে। যখন তারা একে অন্যের সাথে কথা বলে, আলাপ করে। একজন আরেক জনের কথা শোনে। তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েই কাজ করে। কিন্তু কট্ররপন্থা হলো, উম্মতের মধ্যে এমন অবস্থান সৃষ্টি করা যাতে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে না পারে।
এরপর ইসলামের যে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি তা হলো জেন্ডার ইস্যু। এটি ইসলামের নারী পুরুষের স্থান এবং পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়। ড. সাঈদ রামাদান, যাকে লিটল হাসান আল বান্না বলা হতো- তিনি উম্মতের তিনটি সমস্যার কথা বলেছিলেন। একটি হলো শরীয়াহ এবং ফিকহর মধ্যে পার্থক্য করতে না পারা। কোরআন সুন্নাহর বাধ্যতামূলক প্রকৃতির (নরহফরহম হধঃঁৎব) সাথে ফিকহর বাধ্যতামূলক নয় এমন প্রকৃতির সাথে পার্থক্য করতে না পারা এবং একে এক করে ফেলা। দ্বিতীয় সমস্যা হলো মুসলিম নারীর দুর্দশা। এ কথাগুলো তিনি বলেছিলেন ১৯৬৫ সালের দিকে। আজ থেকে অনেক আগেই তিনি এটি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। এটি বর্তমানে যেমন ড. ইউসুফ আল কারযাভীর উপলব্ধি, তেমনি মুহাম্মদ আল গাজ্জালীর মতো গ্রেট আলেমরাও একই কথা বলে গেছেন। তৃতীয় সমস্যা হলো শাসকদের আনুগত্য সম্পর্কে ভুল ধারণা (ৎিড়হম সড়ঃরড়হং ড়ভ ড়নবফরবহপব ঃড় ৎঁষবৎং) । নারীদেরকে তার যথাযোগ্য স্থান দিতে হবে। তাদেরকে মানবিক মর্যাদায় সমান মানুষ মনে করতে হবে। তাদের সকল অধিকার দিতে হবে। (দ্রষ্টব্য: ইসলামের সামাজিক বিধান , ড.জামাল আল বাদাবী, ২.রাসূলের যুগে নারী স্বাধীনতা, আল্লামা আবদুল হালিম আবু শুক্কাহ ্এবং ৩. দি স্ট্যাটেস অব মুসলিম উইমেন, ড.ইউসুফ আল কারযাভী)।
এরপর যে সমস্যা আমি মনে করি তাহলো গণতন্ত্রের অভাব। স্বৈরতন্ত্র, রাজতন্ত্র মুসলিম বিশ্বে আছে। এটি পাশ্চাত্যর কাছে মুসলমানদের খারাপ ইমেজই তুলে ধরে। তাদের কাছে মনে হয় মুসলমানদের স্বভাবই হলো এমন। দোষ হল আমাদের আর তারা দেখছে ইসলামই এমন। এর খারাপ প্রভাবটিই মুসলমানদের উপর পড়ে। কিন্তু এর সমাধান কি । এ সম্পর্কে আমি এক লেখায় লিখেছিলাম, ইসলামী আইনের আওতায় গণতন্ত্র শব্দটি বহুপূর্বেই স্বীকৃত হয়ে গেছে। ১৯৪৮ সালে যখন পাকিস্তানের সংবিধান হয় সেখানে ফবসড়পৎধপু, ভৎববফড়স, বয়ঁধষরঃু, ংড়পরধষ লঁংঃরপব ধং বহঁহপরধঃবফ নু ওংষধস ংযধষষ ভঁষষু ড়নংবৎাবফ বলে একটি ধারাই আমাদের পরামর্শে যোগ করা হয়। আমি লক্ষ্য করেছি মাওলানা মওদূদী ডেমোক্রেসি শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। সেখানে তিনি ঞযব-উবসড়পৎধপু শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। তিনি ডেমোক্রেসি শব্দটি পরিহার করেননি। আল্লামা ইকবালও গণতন্ত্রের চেয়ে ভালো বিকল্প নেই বলেছেন। ড. ইউসুফ আল কারযাভী ওংষধসরপ গড়াবসবহঃ, চড়ষরঃরপধষ ঋৎববফড়স ধহফ উবসড়পৎধপু লেখায় বলেছেন এটিই ইসলামের নিকটতম পন্থা। যারা সন্দেহ করে জনগণের সার্বভৌমত্ব, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস, এ ধারণার কি হবে? এ সন্দেহের উত্তরে তিনি বলেছেন- আপনারা যদি এতই ভয় পান তাহলে সংবিধানের একটি ধারায় লিখে দিন, কোরআন ও সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন পাশ করা যাবেনা, তাহলেই সমস্যার সমাধান হবে।
কাজেই গণতন্ত্র সম্পর্কে যারা বেশি ভয় পান তারা যদি গণতন্ত্র না বলতে চান তাহলে ‘ইসলামী গণতন্ত্র’ শব্দ ব্যবহার করতে পারেন। অনেকে খেলাফত শব্দ ব্যবহার করতে চান। কিন্তু প্রত্যেকটি ইসলামী রাষ্ট্রকে আলাদা আলাদা খেলাফত বলবেন কি না তারপর সুস্পষ্ট করতে হবে খেলাফত এর বিস্তৃত রুপ কি? পার্লামেন্ট থাকবে কি না? নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন হবে কি না? মৌলিক অধিকার কি কি হবে? এসব ধারণা সুস্পষ্ট না করে খেলাফত কায়েমের দাবি করায় জটিলতা সৃষ্টি করবে। যতদিন তা না করা হবে ততদিন পর্যন্ত ইসলামী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞগণ ইসলামী রাষ্ট্র এবং গণতন্ত্র পরিভাষা ব্যবহারের পক্ষে।
আমাদের সমস্যার আরেকটি দিক হলো কোরআন এবং সুন্নাহর ভুল ব্যখ্যা। এমন এক সময় ছিল যখন কোরআন এবং হাদিসের পর্যাপ্ত অনৃুবাদ ছিল না। এখন অনেক অনুবাদ হওয়ায় সমস্যা হয়েছে যে প্রত্যেকে হাদিস পড়ে তার একটি ব্যাখ্যা দেয়া শুরু করে, কিন্তু তারা জানেনা হাদিস কত ধরনের। তারা জানে না হাদিসের মধ্যে যদি সংঘাত দেখা দেয় তাহলে তা কিভাবে দূর করতে হবে। আবার কোরআনের সঙ্গে হাদিসের যদি বিরোধ দেখা দেয় তা হলে তা কিভাবে দূর করতে হবে। এর ব্যাখ্যা পদ্ধতি না জেনেই তা করতে থাকে। কিভাবে ‘তারুদ’ (বিরোধ) দূর করতে হবে? হুকুমের মূল্য কি? সব হুকুমই কি ফরজ? না মুস্তাহাব মাত্র? আমল হলেই কি ফরজ হয়ে যায়? এখন যারা শব্দের বিভিন্ন শ্রেণী (যেমন আম, খাস,হাকিকি, মাযাফি, ইত্যাদি) জানবে না, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের পদ্ধতি জানবে না, উসূল আল ফিকহ পড়বে না - তারা যদি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে তাহলে তা ভুল হবে। এ জন্য উসূল এর জ্ঞান খুবই গুরুত্বপূুর্ণ বিষয়।
লেখক
শাহ্ আব্দুল হান্নান
সাবেক সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
মুসলিম বিশ্বের বর্তমান সময়ের প্রধান ইস্যু সমূহ।
শাহ্ আব্দুল হান্নান
বিগত দিনগুলোতে আমার কাছে মুসলিম উম্মাহর জন্য কতগুলো বিষয়কে প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। এর মধ্যে একটি ইস্যুতে আমার মনকে কিছুটা পরিবর্তন করেছি-যা আমি আগে এত বড় ইস্যু হিসেবে দেখেনি। সেটি হলো নব্য সা¤্রাজ্যবাদ (ঘবি ওসঢ়বৎরধষরংস) । এ সা¤্রাজ্যবাদীরা কারা তা আমরা সবাই জানি। আজ তারা চাচ্ছে রাজনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে বিশ্বকে শাসন করতে। তারা চায় তাদের আদেশ নিষেধকেই(ফরপঃধঃরড়হ) মেনে চলতে হবে, তাদের মতো চলতে হবে। আইএমএফ (ওগঋ), বিশ্বব্যাংক (ডড়ৎষফ ইধহশ) কিংবা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডড়ৎষফ ঞৎধফব ঙৎমধহরুধঃরড়হ) মাধ্যমেও এ রকম ডিকটেশন আসতে পারে।নব্য সাম্রাজ্যবাদের পর মুসলিম বিশ্বের জন্য অন্যতম প্রধান ইস্যু হলো শিক্ষা। এ বিষয়টিকে আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।
ওংষধসরুধঃরড়হ ড়ভ কহড়ষিবফমব এর লেখক ড. ইসমাইল রাজি আল ফারুকী’র দৃষ্টিতে শিক্ষা উম্মাহর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। আমি একটু আগে যে চ্যালেঞ্জের (আমেরিকান ডিক্টেরশিপ, আমেরিকান চ্যালেঞ্জ, পশ্চিমা চ্যালেঞ্জ) কথা বললাম তা মোকাবিলা করার জন্য আমাদেরকে একটি ভালো শিক্ষা ব্যবস্থা দাঁড় করাতে হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমেরিকা ও পশ্চিমাদের চ্যালেঞ্জ, সেটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কিংবা সাংস্কৃতিক যেটিই হোক- এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য আমাদের একটি ভালো শিক্ষা ব্যবস্থা দরকার। সভ্যতার দ্বন্দ্বে ইসলাম জয়ী হবে- নামে হোক বেনামে হোক, যদি আমাদের একটি ভালো শিক্ষা ব্যবস্থা এবং ভালো শিক্ষিত জনশক্তি (পুরুষ ও নারী) থাকে। কিংবা যদি আরা তা গড়তে পারি, তবেই তা সম্ভবপর হবে বলে আমি মনে করি।
এখানে আমি শিক্ষার কয়েকটি জটিল বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই। একটি হলো এর সংজ্ঞাগত বিষয়। ইসলামী শিক্ষার ক্ষেত্রে কতগুলো সংজ্ঞাগত বিষয় রয়েছে। ইসলামী শিক্ষা কি?
এটি কি শুধু কোরআন, সুন্নাহ ও ফিকাহর জ্ঞান। নাকি এটি সকল প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞানের ইসলামী মূল্যবোধ, জ্ঞানের ইসলামীকরণ আন্দোলনের সমন্বয়। মালয়েশিয়া, পাকিস্তান প্রভৃতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি বিষয় বেরিয়ে এসেছে, সেটি হলো, সকল শিক্ষাই ইসলামী মূল্যবোধকে ধারণ করবে, ইসলামী শিক্ষার আওতার মধ্যে হবে, মূল্যবোধ ভিত্তিক হবে অথবা এর আওতা বহির্ভূত হবে না। তারা এটি মেনে নিয়েছে যে শুধু কোরআন পড়া, হাদিস পড়া, শুধু ফিকাহ পড়া, আরবি পড়া ইসলামী শিক্ষা নয়। যদি আমাদের ছেলেরা কম্পিউটার সায়েন্স, ফিজিক্্র এবং অন্যান্য সায়েন্স পড়ে এবং তাতে যদি গ্রহণীয় ইসলামী বিষয়ও শিক্ষায় সংযোজিত করা হয় অথবা অন্য কোনোভাবে রাখা হয় তাও ইসলামী শিক্ষার আওতার মধ্যে হবে। কাজেই বলা যায় যেকোনো ভাবেই হোক বর্তমানে সংজ্ঞাগত সমস্যাটি নেই। কিন্তু হতে পারে যারা দুনিয়া সম্পর্কে জানে না- তারা হয়তো বিতর্ক করতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি এলিটদের মধ্যে এ সমস্যাটি নেই এবং আল্লাহতায়ালা চাইলে সেভাবেই বিষয় এগিয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।
এখন আমি আমাদের স্কুল সিস্টেম সম্পর্কে বলতে চাই। বর্তমানে স্কুলের উপর অনেক কাজ হয়েছে। বিশেষভাবে পাকিস্তান, ইরান, সুদানে। সৌদি আরবে স্কুল সিস্টেমে ইসলাম ও আধুনিক শিক্ষার দারুণ সমন্বয় ঘটেছে। সুতরাং বলা যায় আজ আমাদের যতেষ্ট স্কুল শিক্ষার কারিকুলাম আছে যা আমরা বাংলাদেশে নিয়ে আসতে পারি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আজ আমরা যেখানে এসেছি তার ফলে এখানে ইসলামী শিক্ষা ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় গড়ে ওঠা সম্ভব। বাংলাদেশ সহ মুসলিম বিশ্বকে মালয়েশিয়া বা ইসলামাবাদ ইসলামিক ইউনিভার্সিটির ভিত্তিতে শিক্ষা প্রোগ্রাম সাজাতে হবে। এ মডেলকে প্রয়োজন মনে করলে একটু রিফাইল্ড করে, প্লাস-মায়নাস করে আমরা সেটি নিতে পারি। এটি মুসলিম বিশ্বে উচ্চ শিক্ষার ইসলামিকরণে মডেল হতে পারে। এখানে একটি কথা বলতে হবে, অমুসলিমদের জন্য পর্যাপ্ত বিকল্প খোলা রাখতে হবে। এটি আমাদের মনে রাখতে হবে এবং যদি কেউ নাও করে থাকে তবে আমাদের তা করতে হবে। ইসলামের “লা ইকরাহা ফিদদীন” এবং “জাস্টিসের” যে স্পিরিট তা সামনে রাখতে হবে। “লা ইকরাহা ফিদদীন” ও “জাস্টিস” এর মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। একে সামনে রেখে অমুসলিমদের জন্য প্রচুর অপশন( যেখানে যে রকম প্রয়োজন) দেয়া উচিত। এখানে কোনো আন্দোলন সৃষ্টি করা, কারো দাবির সুযোগ সৃষ্টি করা, অথবা পত্রিকায় উঠার পর ব্যবস্থা নেয়া যেন না হয়। এটি ইসলামের জাস্টিসের দাবি এবং এটিই আমাদের জন্য ভালো।
এখানে মাদরাসা স্ট্রিম সম্পর্কে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। মাদরাসা স্ট্রিম সম্পর্কে আমি খুব ব্যাপকভাবে চিন্তা করেছি। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি মাদরাসাকে শুধু আলেম তৈরি করার জন্যেই চাচ্ছি? তার উদ্দেশ্য কি? নাকি শিক্ষার একটি মূলধারা করতে চাচ্ছি? প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি শুধু আলেম তৈরি করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে তো এত মাদরাসার দরকার নেই। এত কওমী কিংবা এত আলিয়া মাদরাসার তাহলে প্রয়োজন কি? যদি আমরা চাই মাদরাসা ধারা অন্যতম একটি মূলধারা হবে তাহলে রেডিক্যাল পরিবর্তন করতে হবে। এ পরিবর্তনটি কি? আমাদের দেশে কামিল মাদরাসার চারটি কোর্স আছে-আদব, তাফসীর, ফিকাহ ও হাদিস। আমি সংক্ষেপে বলব, আরো কয়েকটি কামেল কোর্স তাতে যোগ করতে হবে। কামেল ইকোনোমিকস, কামেল পাবলিক এ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং অন্যান্য কয়েকটি প্রয়োজনীয় বিষয়ে কামেল খুলতে হবে। চারটির জায়গায় ছয়টি, আটটি বা দশটি করতে হবে। তাতে বর্তমান কোর্সটি আলেম, ফাজেল পর্যন্ত মোটামুটি এক থাকতে পারে। তারা বর্তমানে কি করে? এক পর্যায় পর্যন্ত এ রকম পড়ে তারপর আলাদা হয়ে যায়।
তেমনিভাবে ফাজেল পর্যন্ত ঠিক রেখে আমাদেরকেও আরো চারটি, ছয়টি কোর্স যোগ করতে হবে। সে সাথে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। কওমী মাদরাসার ক্ষেত্রেও একই কথা। যদি মসজিদ আর মাদরাসার জন্যই শুধু আলেম তৈরী করা মাদরাসার উদ্দেশ্য হয়, তাহলে তো এত হাজার হাজার কওমী মাদরাসার দরকার নেই। কিন্তু তাদের যদি উদ্দেশ্য থাকে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি তৈরি করা তাহলে তাদেরকেও নতুন নতুন বিভাগ খুলতে হবে। এখন কেবল দাওরায়ে হাদিস আছে। তাদের শেষের চার বছর পরিবর্তন করতে হবে। এখানে দাওরায়ে একতেমাদের (অর্থনীতি) মতো আরো তিন-চারটি দাওরা বাড়াতে হবে যাতে তারা সমাজ, জাতি এবং অর্থনীতি, প্রশাসনের জন্য যোগ্য লোক তৈরি করতে পারবে। এ ধরনের সংস্কার করলেই কওমী মাদরাসা এবং আলীয়া মাদরাসা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার দু’টি মূল শাখা হিসেবে টিকে থাকবে এবং অবদান রাখতে পারবে।
এরপর আমি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সহশিক্ষা নিয়ে আলোচনা করব। সহশিক্ষার ক্ষেত্রে বর্তমানে দু’টিই অনুসরণ করা হচ্ছে। মালয়েশিয়ায় ড্রেস কোডসহ (হিজাবসহ) একত্রে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে এবং ইসলামাবাদে ক্যাম্পাস আলাদা করে দেয়া হয়েছে। ইসলামী শিক্ষাবিদগণ দু’টিকেই বৈধ গণ্য করেছেন। আমি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সহশিক্ষা খুব সুবিধাজনক মনে করি না। আমাদের বর্তমান সমাজ পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ার তুলনায় অধিক সেক্যুলার। এখানে আলাদা ক্যাম্পাস ভালো ও সংগত। তবে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ইসলামী শিক্ষাবিদগণ যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন সে কথা আলাদা। কিন্তু অবশ্যই ছেলেমেয়েদের জন্য আলাদা আলাদা ক্যাম্পাসই লক্ষ্য হওয়া উচিত। হাই স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে সহশিক্ষা একেবারেই থাকা উচিত নয়। এর ফলাফল খুব খারাপ হয়।
ইসলামের একটি অন্যতম প্রধান বিষয় হলো বিভিন্ন রকম চরমপন্থা ( াধৎরড়ঁং ঃুঢ়ব ড়ভ বীঃৎবসরংস) যা ইসলামকে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যারা চরমপন্থী তাদের অবস্থান কারোর হয় এ পাশে নয় ঐ পাশে, যে কোনো এক প্রান্তে। ফলে তারা কখনো সমন্বয় করতে জানে না। সমন্বয় করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু সমন্বয় করা তখনই সম্ভব যখন মানুষ মডারেট হয়, মধ্যপন্থা অবলম্বন করে। যখন তারা একে অন্যের সাথে কথা বলে, আলাপ করে। একজন আরেক জনের কথা শোনে। তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েই কাজ করে। কিন্তু কট্ররপন্থা হলো, উম্মতের মধ্যে এমন অবস্থান সৃষ্টি করা যাতে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে না পারে।
এরপর ইসলামের যে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি তা হলো জেন্ডার ইস্যু। এটি ইসলামের নারী পুরুষের স্থান এবং পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়। ড. সাঈদ রামাদান, যাকে লিটল হাসান আল বান্না বলা হতো- তিনি উম্মতের তিনটি সমস্যার কথা বলেছিলেন। একটি হলো শরীয়াহ এবং ফিকহর মধ্যে পার্থক্য করতে না পারা। কোরআন সুন্নাহর বাধ্যতামূলক প্রকৃতির (নরহফরহম হধঃঁৎব) সাথে ফিকহর বাধ্যতামূলক নয় এমন প্রকৃতির সাথে পার্থক্য করতে না পারা এবং একে এক করে ফেলা। দ্বিতীয় সমস্যা হলো মুসলিম নারীর দুর্দশা। এ কথাগুলো তিনি বলেছিলেন ১৯৬৫ সালের দিকে। আজ থেকে অনেক আগেই তিনি এটি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। এটি বর্তমানে যেমন ড. ইউসুফ আল কারযাভীর উপলব্ধি, তেমনি মুহাম্মদ আল গাজ্জালীর মতো গ্রেট আলেমরাও একই কথা বলে গেছেন। তৃতীয় সমস্যা হলো শাসকদের আনুগত্য সম্পর্কে ভুল ধারণা (ৎিড়হম সড়ঃরড়হং ড়ভ ড়নবফরবহপব ঃড় ৎঁষবৎং) । নারীদেরকে তার যথাযোগ্য স্থান দিতে হবে। তাদেরকে মানবিক মর্যাদায় সমান মানুষ মনে করতে হবে। তাদের সকল অধিকার দিতে হবে। (দ্রষ্টব্য: ইসলামের সামাজিক বিধান , ড.জামাল আল বাদাবী, ২.রাসূলের যুগে নারী স্বাধীনতা, আল্লামা আবদুল হালিম আবু শুক্কাহ ্এবং ৩. দি স্ট্যাটেস অব মুসলিম উইমেন, ড.ইউসুফ আল কারযাভী)।
এরপর যে সমস্যা আমি মনে করি তাহলো গণতন্ত্রের অভাব। স্বৈরতন্ত্র, রাজতন্ত্র মুসলিম বিশ্বে আছে। এটি পাশ্চাত্যর কাছে মুসলমানদের খারাপ ইমেজই তুলে ধরে। তাদের কাছে মনে হয় মুসলমানদের স্বভাবই হলো এমন। দোষ হল আমাদের আর তারা দেখছে ইসলামই এমন। এর খারাপ প্রভাবটিই মুসলমানদের উপর পড়ে। কিন্তু এর সমাধান কি । এ সম্পর্কে আমি এক লেখায় লিখেছিলাম, ইসলামী আইনের আওতায় গণতন্ত্র শব্দটি বহুপূর্বেই স্বীকৃত হয়ে গেছে। ১৯৪৮ সালে যখন পাকিস্তানের সংবিধান হয় সেখানে ফবসড়পৎধপু, ভৎববফড়স, বয়ঁধষরঃু, ংড়পরধষ লঁংঃরপব ধং বহঁহপরধঃবফ নু ওংষধস ংযধষষ ভঁষষু ড়নংবৎাবফ বলে একটি ধারাই আমাদের পরামর্শে যোগ করা হয়। আমি লক্ষ্য করেছি মাওলানা মওদূদী ডেমোক্রেসি শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। সেখানে তিনি ঞযব-উবসড়পৎধপু শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। তিনি ডেমোক্রেসি শব্দটি পরিহার করেননি। আল্লামা ইকবালও গণতন্ত্রের চেয়ে ভালো বিকল্প নেই বলেছেন। ড. ইউসুফ আল কারযাভী ওংষধসরপ গড়াবসবহঃ, চড়ষরঃরপধষ ঋৎববফড়স ধহফ উবসড়পৎধপু লেখায় বলেছেন এটিই ইসলামের নিকটতম পন্থা। যারা সন্দেহ করে জনগণের সার্বভৌমত্ব, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস, এ ধারণার কি হবে? এ সন্দেহের উত্তরে তিনি বলেছেন- আপনারা যদি এতই ভয় পান তাহলে সংবিধানের একটি ধারায় লিখে দিন, কোরআন ও সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন পাশ করা যাবেনা, তাহলেই সমস্যার সমাধান হবে।
কাজেই গণতন্ত্র সম্পর্কে যারা বেশি ভয় পান তারা যদি গণতন্ত্র না বলতে চান তাহলে ‘ইসলামী গণতন্ত্র’ শব্দ ব্যবহার করতে পারেন। অনেকে খেলাফত শব্দ ব্যবহার করতে চান। কিন্তু প্রত্যেকটি ইসলামী রাষ্ট্রকে আলাদা আলাদা খেলাফত বলবেন কি না তারপর সুস্পষ্ট করতে হবে খেলাফত এর বিস্তৃত রুপ কি? পার্লামেন্ট থাকবে কি না? নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন হবে কি না? মৌলিক অধিকার কি কি হবে? এসব ধারণা সুস্পষ্ট না করে খেলাফত কায়েমের দাবি করায় জটিলতা সৃষ্টি করবে। যতদিন তা না করা হবে ততদিন পর্যন্ত ইসলামী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞগণ ইসলামী রাষ্ট্র এবং গণতন্ত্র পরিভাষা ব্যবহারের পক্ষে।
আমাদের সমস্যার আরেকটি দিক হলো কোরআন এবং সুন্নাহর ভুল ব্যখ্যা। এমন এক সময় ছিল যখন কোরআন এবং হাদিসের পর্যাপ্ত অনৃুবাদ ছিল না। এখন অনেক অনুবাদ হওয়ায় সমস্যা হয়েছে যে প্রত্যেকে হাদিস পড়ে তার একটি ব্যাখ্যা দেয়া শুরু করে, কিন্তু তারা জানেনা হাদিস কত ধরনের। তারা জানে না হাদিসের মধ্যে যদি সংঘাত দেখা দেয় তাহলে তা কিভাবে দূর করতে হবে। আবার কোরআনের সঙ্গে হাদিসের যদি বিরোধ দেখা দেয় তা হলে তা কিভাবে দূর করতে হবে। এর ব্যাখ্যা পদ্ধতি না জেনেই তা করতে থাকে। কিভাবে ‘তারুদ’ (বিরোধ) দূর করতে হবে? হুকুমের মূল্য কি? সব হুকুমই কি ফরজ? না মুস্তাহাব মাত্র? আমল হলেই কি ফরজ হয়ে যায়? এখন যারা শব্দের বিভিন্ন শ্রেণী (যেমন আম, খাস,হাকিকি, মাযাফি, ইত্যাদি) জানবে না, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের পদ্ধতি জানবে না, উসূল আল ফিকহ পড়বে না - তারা যদি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে তাহলে তা ভুল হবে। এ জন্য উসূল এর জ্ঞান খুবই গুরুত্বপূুর্ণ বিষয়।
লেখক
শাহ্ আব্দুল হান্নান
সাবেক সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
No comments:
Post a Comment